August 6, 2025, 11:47 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে ইসিকে প্রধান উপদেষ্টার চিঠি শেখ হাসিনা কোথায়? গোপন অবস্থান নিয়ে বাড়ছে কৌতূহল মেহেরপুরে সড়কে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ডাকাতি, আতঙ্কে এলাকাবাসী জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর/ অন্তর্নিহিত বার্তাটি আগামী দিনের জন্যও বলবৎ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার বিস্ফোরণ: রাষ্ট্রপতি তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার তালিকার শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আবদুল কাদের/‘নিজেদের ছাত্রলীগ প্রমাণ করতে নির্যাতনে অংশ নিতেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা’ জাতীয় নাগরিক পার্টির ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা জাতিসংঘের প্রতিবেদনের মূল্য দেয় না কেউ, ভেসে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা : খোদ জাতিসংঘ হাজার কোটি টাকার গড়াই নদী খনন/ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতার অভাবে ব্যর্থতা

শুধু মার্চ মাসে চিন্থিত করা গেছে ৪৪২ নারী নির্যাতন, ১৬৩ ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ৩৬টি

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
চলতি বছরের মার্চ মাসে ৪৪২ জন নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এছাড়া, ধর্ষণের শিকার হয়েছের ১৬৩ জন। এরমধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছন ৩৬ জন।
এড়ড়মষব হবংি
সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া বেগম শান্তি জানান, ধর্ষণের শিকার ২ জনকে হত্যা করা হয়। এছাড়া, ৫৫ জন কন্যাসহ ৭০ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
সম্প্রতি নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে রাবেয়া বেগম শান্তি বলেন, “বর্তমানে নারীর প্রতি বিদ্বেষ, বিদ্বেষমূলক আচরণ ও ভাষা নারীর স্বাধীন চলাফেরাকে বাধাগ্রস্ত করে তুলছে। যেখানে সেখানে নারীর পোশাক, নারীর সাজসজ্জা, নারীর চলাফেরা নিয়ে প্রকাশ্যে অপমান করা হচ্ছে। গণপরিসরে নারীকে নানাভাবে শারীরিক ও মৌখিকভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে নারীর প্রতি ঘৃণা ছাড়ানো হচ্ছে, নারীকে বহুভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এবং, বাধাহীনভাবেই তারা সমাজে এসকল অপকর্ম সাধন করতে পারছে, যা তাদের আরও বেপরোয়া করে তুলছে। নারীর অগ্রগতিকে বাধা দেওয়ার লক্ষ্যে ভীতির পরিবেশ তৈরীর জন্য এ ধরণের অপচেষ্টা করা হচ্ছে।”
“আমরা লক্ষ্য করছি যে, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার সহিংসতার মাত্রা পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। মাত্রা ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। ১৮ বছরের নীচে কন্যা শিশুদের উপর অন্যদিকে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাসের ক্ষেত্রে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।”
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি (আবরার ফাহাদ হত্যা) পালিয়ে যাচ্ছে, শিশু ধর্ষণের আলোচিত ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। সারা দেশে ছিনতাইসহ অপহরণ, খুন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে নারীসহ সকল মানুষ নিরাপত্তাহীন ও বিপন্ন বোধ করছে।”
নারী বিদ্বেষী অপসংস্কৃতির প্রভাব এ দেশের নারী জাগরণের পথিকৃত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিও পরিলক্ষিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিকৃতিতে কালি লেপন, রংপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন হয়েছে। আমরা মনে করি, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন সমাজের অচলায়তন ভেঙে নারীদের আলোর পথের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি সমাজের অবরোধ ভাঙার জন্য, নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য, নারীর মুক্তির জন্য আজীবন যে সংগ্রাম করে গেছেন।“
এ সময় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, সুফিয়া কামালসহ নারী জাগরণের পথিকৃতদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার জোর দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক বলেন, “আপনারা জানেন যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে নারীর জন্য ৬০% কোটা বহাল ছিলো। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ খসড়া প্রজাপনে এই বিধান রোহিত করা হয়েছে। যা কিনা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী শিকালে অগ্রসর করার জন্য অসঙ্গতিপূর্ণ।” বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫ এ নারী কোটা এখান রাখার দাবি জানায়।
“সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন। নারী সমাজের দীর্ঘ দিনের দাবি দাওয়া নিয়ে নারী সমাজের পক্ষ থেকে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বিভিন্ন সুপারিশসমূহ প্রধান উপদেষ্টার কাছে দিয়েছে। যেখানে এ দেশের গত পাঁচ দশকের নারী আন্দোলনের অবাস্তবায়িত মূল মূল দাবিসমূহের প্রতিফলন ঘটেছে, যা নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি অতীতের মতো সুপারিশ পেশের সঙ্গে সঙ্গে মৌলবাদী, নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীর অধিকার এবং নারী- পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। আমরা আশা করবো এই অপতৎপরতা, অপকৌশল রোধে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর মানবাধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকার, সকল রাজনৈতিক দল ও সমাজ এগিয়ে আসবে।”
তিনি বলেন, “সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে উচ্ছৃঙ্খল জনতা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। বিবেক বা যুক্তির জায়গায় মনোজগতে স্থান নিয়েছে প্রতিহিংসা। এই উচ্ছৃঙ্খল জনতা শুধু জনসমক্ষে প্রতিপক্ষকে হেনস্তা, মারধর ও অপমান করেই ক্ষান্ত হচ্ছেনা। গণপিটুনির মাধ্যমে প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে মানুষকে, এর সাথে চলছে লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এর মাধ্যমে ধ্বংসের খেলা।”
শিক্ষার্থীরাও দলে দলে বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “দাবি আদায়ের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে তারা। শিক্ষাঙ্গনেও বিভিন্নভাবে শিক্ষকদের অবমাননা, জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা, এবং পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করছে না। এই হেনস্থা থেকে নারী শিক্ষকগণও রেহাই পাচ্ছেন না।”
“বিচার প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা ও বিভিন্ন জটিলতা এবং বিচার প্রাপ্তির প্রতি তৈরী হওয়া এক ধরনের অনীহার কারণে বিভিন্ন ঘটনায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য যখন তখন মব সহিংসতার অপতৎপরতা চালু হয়েছে যার ফলে সকল ক্ষেত্রে দেশের সামগ্রিক সামাজিক স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন। এইসকল ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সবসময় কার্যকর ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে দেশের এক বিশেষ জটিল, সঙ্কটময়, পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়েছে।”
আমাদের দেশের সকল পর্যায়ে নারীর অবস্থান এবং অংশগ্রহণ দৃশ্যমান হলেও দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর সমঅধিকার, সমমর্যাদা এবং সমঅংশীদারিত্বের প্রশ্নে সমপ্রতিনিধিত্বে নারী এখনও উপেক্ষিত, এখনও অনেক পিছিয়ে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নারীর সম্পদ সম্পত্তিতে সমঅধিকার নেই, নীতিনির্ধারণী এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়েও নারীর উপস্থিতি অপ্রতুল। আমাদের দেশে নারীর অংশগ্রহণে দেশের অর্থনীতির পশ্চাৎপদতা হ্রাস পেলেও জনগণের মনোজগতে মধ্যযুগীয় ধ্যান ধারণা এখনও বিরাজমান।”
“আমরা মনে করি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নারীর মুক্তির যে আকাঙ্খা প্রতিফলিত হয়েছে, তা নিয়ে নানা বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে নারী সমাজ নিজেদেরকে অগ্রসর করে নিয়ে চলেছে। এই নারী সমাজকে আরও অগ্রসর করে নিতে হলে আমাদের নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ধর্মের দোহাই না দিয়ে বক্তিগতভাবে একজন নাগরিক এবং একজন মানুষ হিসেবে এদেশের ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে অর্ধেক জনগোষ্ঠী- নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সকলেরই যুক্তিসঙ্গত চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন ঘটবে- এই প্রত্যাশা করি।”
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে,
নারী বিদ্বেষী প্রচার প্রচারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। মব সহিংসতার অবসান ঘটনোর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির প্রয়াস প্রতিহত করা উল্লেখযোগ্য।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© All rights reserved © 2024 dainikkushtia.net
Maintenance By DainikKushtia.net